আজকের মানুষের সঙ্গে নিয়েনডার্থাল মানুষকে মিলিয়ে দেখলে হবে না। এই যে আজকের মানুষ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সে চাঁদকে জয় করেছে, মহাশূণ্যে যাতায়ত করেছে, লড়াই করেছে অনেক দূর্যোগ আর রোগ-শোকের বিরুদ্ধে।
"The oldest and strongest emotion of mankind is fear, and the oldest and strongest kind of fear is fear of the unknown."
- H. P. Lovecraft
আজকের মানুষের সঙ্গে নিয়েনডার্থাল মানুষকে মিলিয়ে দেখলে হবে না। এই যে আজকের মানুষ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সে চাঁদকে জয় করেছে, মহাশূণ্যে যাতায়ত করেছে, লড়াই করেছে অনেক দূর্যোগ আর রোগ-শোকের বিরুদ্ধে। কিন্তু ভয়কে জয় করতে পারেনি আজকের মানুষ। মানুষ চাঁদে চলে গেলেও এখনও ভূতের ভয় কাটেনি অনেকের। পৃথিবীতে কেউই অমর নয়, তবু মৃত্যু ভয় কাটে না মানুষের। যথার্থ অর্থে মানুষের ভয়ের কোন সীমা নেই। অন্ধকারকে ভয়, শব্দকে ভয়, আলোকে ভয়, নৈঃশব্দকে ভয়, প্রেমকে ভয়, ঘৃণাকেও ভয়। কতো রকম ভয়ই না পায় মানুষ। ভয়ের কারণে বহু মানুষ আটকে থাকে জীবনের গড়পরতার হিসাবের খাতাতেই। চাকরি হারালে কী হবে? অমুকে রেগে গেলে কী হবে? মরে গেলে কী হবে? এইসব ভয়ার্ত প্রশ্নের আড়ালেই রয়ে গেছে ভয়ের কার্যকারণের ইতিহাস। ভয়টা আদতে অজানাকে-অচেনাকে। চেনা গন্ডির বাইরে গেলেই সাধারণ মানুষ ভয়ে কুঁকড়ে যায়।
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন আর গুরুত্বপূর্ণ সমরবিদ সুন জু তার বিখ্যাত ‘আর্ট অব ওয়্যার’ গ্রন্থে বলেছিলেন, ‘তুমি যদি নিজেকে জানো আর শত্রুকে চেনো তাহলে শত যুদ্ধের ফলাফল নিয়েও ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ তাহলে মোদ্দা কথায় নিজেকে জানতে হবে আর জানতে হবে চারপাশের শত্রুকে। শত্রুকে? শত্রæ আসলে অচেনা, অজানা ক্ষতিকর কোন সত্তা। করোনা ভাইরাসও শত্রু হতে পারে আবার পরীক্ষায় ফেলের ভয়ও শত্রু হতে পারে। শত্রুকে চিনতে পারলে, জানতে পারলে তাকে ঘায়েল করা তো কঠিন নয়। কাজেই ভয়কে জয় করার মূল মন্ত্র রয়েছে শত্রুকে চেনা আর নিজেকে চেনার মধ্যেই।
তারপরও বলা যতো সহজ ভয়কে জয় করা অতো কঠিন নয়। কারণ ভয় রয়ে গেছে আমাদের প্রত্ন শরীরে, জিনে, ক্রোমজমে। সেই যে আদিকালের গুহা মানব কিংভা তারও আগের বনচারী মানব তারা তো জগত সংষারের কিছুই বুঝতো না, কিছুই জানতো না। তাদের পদে পদে ছিলো ভয়। বুনো জন্তুর আক্রমণ, হঠাৎ বজ্রপাত, বৃষ্টি, ঝড় এইসবকে প্রকৃতিক দূর্যোগকেও তারা দেখেছেন দৈব ভয় হিসাবে। আগুনকে আমরা চিনি এখন, ক্ষেত্রবিশেষে আগুনকে শাসন করতে জানি, বনের বাঘ-সিংহকে চিনি, শাসনও করতে পারি। তবুও ভয়কে শাসন করতে পারি না। কারণ ভয়ের যে হরমোন তা প্রবাহিত হয়েছে পূর্ব পুরুষের রক্ত স্রোতে থেকে।
তবে কি মুক্তি নেই ভয় থেকে? আছে। সঠিক মনোচিকিৎসা, নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর মতো কাজ দিয়ে অনেক ভয়কেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তারপরও ক্ষেত্র বিশেষে কারো কারো ভেতরে ভয়টা ফোবিয়া বা আতঙ্কের চেহারা পায়। সেই চেহারা নির্মূল করতে বিশেষজ্ঞের সহায়তা লাগে। আশার কথা মনোবিজ্ঞানী ও স্বায়ুবিজ্ঞানীরা কাজ করছেন ভয়কে নিয়ে। অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো একটা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলই হবে ভয় নির্মূলের নিরীহ উপায়। ততোক্ষণ আশাবাদ আর হাজার বছরের ভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই চলুক। সেই লড়াইয়ে সন্দীপনের এই বইটি হতে পারে বিরাট এক হাতিয়ার। সম্ভবত বাংলা ভাষায় ভয় নিয়ে এমন ভালো কাজ, এমন বৃহৎ কাজ আর হয়নি।
আজকের মানুষের সঙ্গে নিয়েনডার্থাল মানুষকে মিলিয়ে দেখলে হবে না। এই যে আজকের মানুষ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সে চাঁদকে জয় করেছে, মহাশূণ্যে যাতায়ত করেছে, লড়াই করেছে অনেক দূর্যোগ আর রোগ-শোকের বিরুদ্ধে।
By সন্দীপন ধর
Category: বিজ্ঞান
"The oldest and strongest emotion of mankind is fear, and the oldest and strongest kind of fear is fear of the unknown."
- H. P. Lovecraft
আজকের মানুষের সঙ্গে নিয়েনডার্থাল মানুষকে মিলিয়ে দেখলে হবে না। এই যে আজকের মানুষ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সে চাঁদকে জয় করেছে, মহাশূণ্যে যাতায়ত করেছে, লড়াই করেছে অনেক দূর্যোগ আর রোগ-শোকের বিরুদ্ধে। কিন্তু ভয়কে জয় করতে পারেনি আজকের মানুষ। মানুষ চাঁদে চলে গেলেও এখনও ভূতের ভয় কাটেনি অনেকের। পৃথিবীতে কেউই অমর নয়, তবু মৃত্যু ভয় কাটে না মানুষের। যথার্থ অর্থে মানুষের ভয়ের কোন সীমা নেই। অন্ধকারকে ভয়, শব্দকে ভয়, আলোকে ভয়, নৈঃশব্দকে ভয়, প্রেমকে ভয়, ঘৃণাকেও ভয়। কতো রকম ভয়ই না পায় মানুষ। ভয়ের কারণে বহু মানুষ আটকে থাকে জীবনের গড়পরতার হিসাবের খাতাতেই। চাকরি হারালে কী হবে? অমুকে রেগে গেলে কী হবে? মরে গেলে কী হবে? এইসব ভয়ার্ত প্রশ্নের আড়ালেই রয়ে গেছে ভয়ের কার্যকারণের ইতিহাস। ভয়টা আদতে অজানাকে-অচেনাকে। চেনা গন্ডির বাইরে গেলেই সাধারণ মানুষ ভয়ে কুঁকড়ে যায়।
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন আর গুরুত্বপূর্ণ সমরবিদ সুন জু তার বিখ্যাত ‘আর্ট অব ওয়্যার’ গ্রন্থে বলেছিলেন, ‘তুমি যদি নিজেকে জানো আর শত্রুকে চেনো তাহলে শত যুদ্ধের ফলাফল নিয়েও ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ তাহলে মোদ্দা কথায় নিজেকে জানতে হবে আর জানতে হবে চারপাশের শত্রুকে। শত্রুকে? শত্রæ আসলে অচেনা, অজানা ক্ষতিকর কোন সত্তা। করোনা ভাইরাসও শত্রু হতে পারে আবার পরীক্ষায় ফেলের ভয়ও শত্রু হতে পারে। শত্রুকে চিনতে পারলে, জানতে পারলে তাকে ঘায়েল করা তো কঠিন নয়। কাজেই ভয়কে জয় করার মূল মন্ত্র রয়েছে শত্রুকে চেনা আর নিজেকে চেনার মধ্যেই।
তারপরও বলা যতো সহজ ভয়কে জয় করা অতো কঠিন নয়। কারণ ভয় রয়ে গেছে আমাদের প্রত্ন শরীরে, জিনে, ক্রোমজমে। সেই যে আদিকালের গুহা মানব কিংভা তারও আগের বনচারী মানব তারা তো জগত সংষারের কিছুই বুঝতো না, কিছুই জানতো না। তাদের পদে পদে ছিলো ভয়। বুনো জন্তুর আক্রমণ, হঠাৎ বজ্রপাত, বৃষ্টি, ঝড় এইসবকে প্রকৃতিক দূর্যোগকেও তারা দেখেছেন দৈব ভয় হিসাবে। আগুনকে আমরা চিনি এখন, ক্ষেত্রবিশেষে আগুনকে শাসন করতে জানি, বনের বাঘ-সিংহকে চিনি, শাসনও করতে পারি। তবুও ভয়কে শাসন করতে পারি না। কারণ ভয়ের যে হরমোন তা প্রবাহিত হয়েছে পূর্ব পুরুষের রক্ত স্রোতে থেকে।
তবে কি মুক্তি নেই ভয় থেকে? আছে। সঠিক মনোচিকিৎসা, নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর মতো কাজ দিয়ে অনেক ভয়কেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তারপরও ক্ষেত্র বিশেষে কারো কারো ভেতরে ভয়টা ফোবিয়া বা আতঙ্কের চেহারা পায়। সেই চেহারা নির্মূল করতে বিশেষজ্ঞের সহায়তা লাগে। আশার কথা মনোবিজ্ঞানী ও স্বায়ুবিজ্ঞানীরা কাজ করছেন ভয়কে নিয়ে। অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো একটা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলই হবে ভয় নির্মূলের নিরীহ উপায়। ততোক্ষণ আশাবাদ আর হাজার বছরের ভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই চলুক। সেই লড়াইয়ে সন্দীপনের এই বইটি হতে পারে বিরাট এক হাতিয়ার। সম্ভবত বাংলা ভাষায় ভয় নিয়ে এমন ভালো কাজ, এমন বৃহৎ কাজ আর হয়নি।