Purchase!

অনির্ণীত হুমায়ূন

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না হুমায়ূন আহমেদ বাংলাসাহিত্যের জনপ্রিয়তম লেখক। যেমন অকাতরে লিখেছেন তিনি তেমনি তার বই পাঠকও গ্রহণ করেছে অকাতরে।
By মুম রহমান
Category: প্রবন্ধ সংকলন
Paperback
Ebook
Buy from other retailers
About অনির্ণীত হুমায়ূন
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না হুমায়ূন আহমেদ বাংলাসাহিত্যের জনপ্রিয়তম লেখক। যেমন অকাতরে লিখেছেন তিনি তেমনি তার বই পাঠকও গ্রহণ করেছে অকাতরে। গল্প, উপন্যাস, উপাখ্যান, কল্পকাহিনী, ভ্রমণ কাহিনী, নাটক, রম্য রচনা যা কিছুতেই তিনি হাত দিয়েছেন সেখানেই স্বর্ণরেণু ঝরে পড়েছে। তার বই ঘরে নেই এমন শিক্ষিত পরিবার বাংলাদেশে নেই। তার বই পড়েননি এমন পাঠকও এ দেশে দূর্লভ। লক্ষ লক্ষ বই বিক্রি হয়েছে, সংস্করণের পর সংস্করণ হয়েছে, লাইন দিয়ে তার বই কিনেছে মানুষ। হুমায়ূন আহমেদের পাঠকের অভাব নেই।

এর উল্টো চিত্রও আছে। দেশে এতো এতো সাহিত্য পত্রিকা, সাহিত্য সমালোচক, বোদ্ধা, লেখক আছেন যাদের বৃহত্তম অংশই হুমায়ূনের সাহিত্য নিয়ে লেখালেখি করেনি। বিস্ময়কর এবং বেদনাদায়ক হলেও সত্য যে, হুমায়ূন আহমেদ একই সঙ্গে নন্দিত, অন্যদিকে নিন্দিত। তার অধিকাংশ রচনাই পুনরাবৃত্তিমূলক, তিনি হালকা, চটুল বিষয়ে লেখেন, তার লেখায় শিক্ষামূলক কিছু নেই ইত্যাদি নানা অভিযোগ আছে তার লেখা নিয়ে। তবে মজার বিষয় হলো, এই সব অভিযোগও সুস্পষ্ট নয়। মানে কোন সমালোচক, বোদ্ধা বা পাঠক তার বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে, তুলনামূলক সাহিত্য আলোচনার মাধ্যমে হুমায়ূন সাহিত্যের দূর্বলতার কথা লিপিবদ্ধ করেননি। সব আলোচনাই মৌখিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক।

এমনকি অনেক প্রতিথযশা লেখক এবং হুমায়ূন আহমেদের ঘণিষ্টজনও হুমায়ূন সাহিত্য নিয়ে কথা বলেন না তেমন। তিনশতাধিক বইয়ের ¯রাষ্টাকে নিয়ে আঙুলে গণা কয়েকটি আলোচনা চোখে পড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণাই প্রতুল। সাহিত্যিকের জীবন, এমনকি তার সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণও সাহিত্য অনুধ্যানে কাজে লাগে। বিশেষ করে গবেষক, সমালোচকের জন্যে এগুলো দরকারী। কিন্তু সাহিত্যিক ও তার সাহিত্যকর্মের ধারা ও প্রবণতা বুঝতে হলে সর্বাগ্রে তার রচনাকর্ম বিশ্লেষণ জরুরি মনে করি।

হুমায়ূন আহমেদ শুধু নয়, বিশ্বাস করি, আমাদের কালের সকল সাহিত্যিকের সাহিত্য কর্ম নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। তাদের রচনা পাঠ ও বিশ্লেষণ একটি স্বাস্থ্যকর সাহিত্য প্রতিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। নির্নয় হওয়া উচিত সাহিত্যিকের কর্মের বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব, এমনকি দূর্বলতাও। সে বিবেচনা থেকে ‘অনির্ণীত হুমায়ূ’ গ্রন্থের সূচনা। এই গ্রন্থের মূল প্রবণতাই হলো, ভক্তি-বিদ্বেষ সব কিছুর উর্দ্ধে থেকে নির্লিপ্তভাবে হুমায়ূন আহমেদের উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের আলোচনা করা। প্রবন্ধগুলো অনেকটা একাডেমিক, ক্ষেত্রবিশেষে গুরুগম্ভীর। তবে যেহেতু দশ জন লেখক লিখেছেন এবং প্রত্যেকের বিষয়বস্তুও আলাদা সেহেতু সবগুলো লেখার মেজাজ এক রকম নয়। হামীম কামরুল হক আমার প্রিয় একজন মানুষ। তার পান্ডিত্য ও বিনয় আমাকে মুগ্ধ করে। সে হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধে আকর উপন্যাস ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ নিয়ে লিখেছে। জোছনা ও জননীর ছায়া ও মায়া তাকে চিরকাল ঘিরে থাকুক। প্রবন্ধের শেষে তার প্রস্তাবনাটি ভেবে দেখার মতো।

মোজাফ্ফর হোসেন চলতি কালের ভীষণ সম্ভাবনাময় লেখক। একই সঙ্গে সৃষ্টিশীলতা এবং সমালোচনার হাত তার আছে। আমার বিশ্বাস হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে শক্তিশালী কাজ হলো তার ছোটগল্প সমূহ। আমার আরও বিশ্বাস হুমায়ূন আহমেদের ছোটগল্প নিয়ে মোজাফ্ফর হোসেনের দীর্ঘ লেখাটি পরবর্তীকালের গবেষকদেরও কাজে লাগবে।

স্থপতি সৈয়দ সাঈদ নিজে রম্য রচনা ও ব্যঙ্গ ছড়া লেখেন। তার কলম থেকে হুমায়ূন সাহিত্যের রঙ্গ-রসের দিকটির পরিচয় পাঠক পাবেন।

কৃপা নাহার মিসির আলিকে নিয়ে যে দীর্ঘ রচনা লিখেছেন, মিসির আলি ভক্তদের জন্যে তার গাইড বইয়ের মতোই কাজ করবে। মিসির আলি উপাখ্যানের ২১টি গ্রন্থ মন্থন করে তিনি মিসির আলির ঠিকুজির খোঁজ নিয়েছেন।

অনুবাদক সামিয়া কামাল হুমায়ূন আহমেদের ভ্রমণ কাহিনীগুলো বিশ্ব সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ কাহিনীগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন। তার লেখাটি সরস ও তথ্যবহুল।

ফাউন্টেনপ্যান, বলপয়েন্ট, কাঠপেন্সিল, রঙপেন্সিল হুমায়ূন আহমেদের ব্যতিক্রম এই চারটি বই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন সানজিদা হক মিশু। এই বইগুলো হুমায়ূন অনুধাবন ও অনুভবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কোথাও ব্যক্তিগত স্মৃতি, কোথা প্রিয় লেখক কিংবা শিল্পী নিয়ে কথা বলেছেন হুমায়ূন। হুমায়ূন আহমেদের শিল্প-সাহিত্য ভাবনার অনেক অনুসঙ্গই এই বই চারটিতে পাওয়া যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক সানজিদা হক মিশু এই চারটি বইয়ের আলোকে অন্য এক হুমায়ূনকে আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন।

তুলনায় ¯ স্নিগ্ধা বাউল ও রুমা মোদকের প্রবন্ধ দুটি নাতিদীর্ঘ। ¯স্নিগ্ধা বাউল মূলত হুমায়ূন আহমেদের বহুল আলোচিত উপন্যাস ‘এইসব দিনরাত্রি’তে নাগরিক জীবনের খন্ড চিত্র এঁকেছেন। রুমা মোদক লিখেছেন প্রায় অনাবিস্কৃত এক হুমায়ূন আহমেদের কথা। স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশের শিল্পসাহিত্যের অন্যতম সক্রিয় জমিন ছিলো মঞ্চ নাটক। কেন সে অর্থে হুমায়ূন তেমন মঞ্চ নাটক লেখেননি, যৎসামান্য যাই লিখেছেন তার মধ্যে কি সম্ভাবনা আছে এসবই তলিয়ে দেখেছেন এখনকার আলোচিত নাট্যকার, মঞ্চকর্মী রুমা মোদক। নাট্যকার, গবেষক এবং রাজনীতি সচেতন তরুণ লেখক তানভীর আহমেদ সিডনী লিখেছেন হুমায়ূনের রাজনৈতিক উপন্যাস ‘দেয়াল’ নিয়ে। তার লেখাটি ‘দেয়াল’ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।

সচরাচর হুমায়ূন আহমেদকে যে হাল্কা বা চটুল লেখক বলা হয়, তরুণদের প্রিয় লেখক বলা হয়, সম্ভবত তার কারণ হিমু উপাখ্যানমালা। ‘হিমু এক আউটসাইডার’ লেখাটির মাধ্যমে আমি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি, আপাতত মেজাজে হাল্কা-সরল হলেও হিমু আসলে কতোটা গভীর ও জটিল।

লেখা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু দিককে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম দিক হলো, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা প্রবন্ধ লেখার পূর্বাভিজ্ঞতা আছে তাদের নির্বাচন করা হয়েছে। আরেকটি দিক হলো এই সংকলনে আমি ছাড়া বাকী সব লেখকই তরুণ। আমি চেয়েছি তরুণদের দৃষ্টিতে হুমায়ূন আহমেদকে গবেষণার নির্লিপ্ততায় দেখা হোক।

সম্পাদক হিসাবে আমি লেখকের মূল্যায়নকে গুরুত্ব দিয়েছি। এটা কোন মতেই ভাবার কারণ নেই যে, এখানে যে সব লেখা ছাপা হয়েছে তার সবগুলোই আমার মনঃপুত বা সব মতামতেই আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। ভিন্ন মতের বৈচিত্র আমাকে আকৃষ্ট করেছে।

সংকলনের সকল লেখককে আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমার রাগ, অভিমান, আব্দার, অভিযোগ সহ্য করে শেষ পর্যন্ত লিখেছেন এটি আমার মনে থাকবে। যারা কথা দিয়েও লেখা দেননি, তাদেরকে ধন্যবাদ। কারণ শেষ পর্যন্ত লেখা দিতে না-পারলে তারা যে হুমায়ূনকে নিয়ে ভাবছেন, ভাববেন সেটাও কম প্রাপ্তি নয়।

রাহেল রাজিবকে বিশেষ ধন্যবাদ এই সংকলন নির্মাণের শুরুর দিকের প্রেরণা ও সহায়তা সেই-ই দিয়েছে। শেষ মুহূর্তের আন্তরিক সহযোগিতার জন্যে সিডনী ও তাপসকে ভালোবাসা। ওদেরকে আমি সব সময়ই পাই, বিপদের সময় বেশি করে পাই। অভাজনের জন্যে এ অনেক বড় প্রাপ্তি।

এক্ষণে এটা জানিয়ে রাখতে চাই, হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য চর্চা নিয়ে এটা আমাদের প্রথম প্রয়াস। শুরুর দূর্বলতা কাটিয়ে উঠবো, কারণ আন্তরিকতার অভাব আমাদের নেই। ‘অনির্ণীত হুমায়ূন’ শিরোনামে আমরা বছরে অন্তত দুটো করে বই তার জন্মদিন ও মৃত্যুদিন উপলক্ষ্যে প্রকাশের চেষ্টা করবো। বাকীটা পাঠকের হাতে। শেষ পর্যন্ত পাঠকই তো ভরসা।

মুম রহমান
Creative Dhaka
  • Copyright © 2025
  • Privacy Policy Terms of Use