Purchase!

সমুদ্রের বই

পৃথিবীর তিনভাগ জল একভাগ মাটি; আমাদের তিনভাগ মাটি, একভাগ জল। তবু দক্ষিণেই আমাদের যাত্রা কেবল। অবিরাম আমরা সমুদ্রের কাছে ছুটে যাই। কারণ আমরা নিজেরাও সমুদ্রকে ধারণ করি আমাদের ভেতর। কিংবা আমরা নিজেরাই হয়তো সমুদ্রের ছদ্মবেশ।
By আবিদ-এ-আজাদ, মুম রহমান
Category: কবিতা ও আলোকচিত্র,কবিতা
Paperback
Ebook
Buy from other retailers
About সমুদ্রের বই
সমুদ্রের সাথে আমার বসবাস প্রায় বিশ বছর। সমুদ্রের কাছাকাছি গেলে আমি সবকিছু ভুলে যাই। নিজেকে তখন খুব বড় মনে হয়। অদ্ভুত সব স্বপ্ন কাজ করে। সমুদ্রের টানে প্রকৃতিকে সব সময়ই নতুন রূপে পেয়েছি। আমার ধারনা হয়েছে, সমুদ্রের রূপ কেউ কখনও ছবির ফ্রেমে বন্দী করে শেষ করতে পারবে না। আজও বুঝতে পারি না আগামীকালের সূর্যোদয়ের রং কি হবে? সূর্যাস্তের সময় নীল দিগন্ত কতটা রক্তাক্ত হবে ? নাকি ভয়ঙ্কর কালো মেঘ এসে উত্তাল সমুদ্রকে আহবান জানাবে তান্ডবলীলার! অমাবস্যা, পূর্ণিমা, তারা ভরা রাতের আকাশ, শো শো গর্জন, জোয়ার-ভাটার অপরূপ দৃশ্য, সকাল-দুপুর, বিকেল-সন্ধ্যা-রাত আমার কাছে সমুদ্রের সব রূপই এক একটা বিষ্ময়। কী নাই সমুদ্রে! সমুদ্রের অনিঃশেষ রহস্য ভান্ডার প্রকৃতিকে যেমন মানুষকেও তেমন, করে তুলছে প্রতিনিয়ত অতি রহস্যময়।

সমুদ্রের ছবি তুলতে যাবো বন্ধু বান্ধবকে বলতেই যখন তখন আমার দল তৈরি হয়ে যায়, একেকবারের ভ্রমণ একেক দলে পরিণত হয়। সচেতন ভাবেই এ সঙ্গ আমি খুব উপভোগ করি। প্রত্যেকবারই বন্ধুদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আমি তখন একই চিত্রনাট্যের ধারাভাষ্য দিতে থাকি। এমনও হয়েছে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত, সূর্যাস্ত থেকে নিশিরাত সমুদ্রের ছবি তুলে গেছি একই স্থানে দাঁড়িয়ে আর দেখে গেছি কি অপরূপ সমুদ্রের রূপ বদলে যায় কল্পনার অতীত। ছয় ঋতুর দেশ আমাদের। কিন্তু আমি বলবো সমুদ্রের কোন ঋতু নেই। এ ঋতু-রীতি গণনা করে শেষ করা যাবে না। এ ধরনের পর্যবেক্ষণ শুধু আমার নয় যারা সমুদ্র নিয়ে কাজ করছেন তাদের সমগ্র জীবনে এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে আছে।

সমুদ্রের বইটি আমার কাছে অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রত্যেকটি ছবির পেছনে রয়েছে একেকটি আস্ত গল্প। রয়েছে পেশাগত জীবনের যাত্রাও। আমার আগ্রহের কারণেই সমুদ্রের ছবি নিয়ে বন্ধু মুম রহমানের অনবদ্য লেখা। ছবি তুলতে তুলতে কোন সময় নাওয়া-খাওয়া নেই। বুঝতে পারছিলাম না এ যাত্রায় বাঁচবো কিনা। অনেক সময় মনে হয়েছে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছি। এ যেন অন্তহীন যাত্রা। শুধু সমুদ্রকে দেখার জন্য কত আয়োজন। এতসবের পর রয়ে যায় সমুদ্রলীলা!

মানুষের প্রয়োজনের শেষ নেই। প্রকৃতি সবাই উপভোগ করতে পারে না। তাদের জোছনা রাতে সমুদ্রতীরের ভয়, গেজেটে আসক্তি, জৈবিক ব্যথা-বেদনা, উন্মুক্ত বিছানার অস্বস্তি, শো শো শব্দে বিরক্তি প্রকৃতির রসায়নের সাথে মিশে যাওয়ার পথে বাধা। কিন্তু আমার কী প্রয়োজন তা আজও কাউকে বলতে পারিনি। শুধু বলেছি সমুদ্রকে, শুদ্ধ খুঁজেছি তার কোলে।

সমুদ্রের সঙ্গে আমার শুধু অনুরাগের সম্পর্ক নয়, তার সাথে কিছু বিরাগেরও স্মৃতি আছে। সে আমার অনেকগুলো ক্যামেরাকে নোনা জলের গভীর স্বাদ দিয়েছে। সে গভীর হতে সমুদ্র আর ক্যামেরাগুলো কখনও ফেরত দেয়নি। অসংখ্য ছবি সেসব ক্যামেরায় রয়ে গেছে। মূল অনেক ছবিই আর উদ্ধার করতে পারিনি। সেসব অভিজ্ঞতা আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবুও বলব, সমুদ্রের ছবি তুলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত আমার মনমানসিকতার বদল হয়েছে। সূর্যের তাপ, বৃষ্টি, ঝড়, সাইক্লোন, বিপদ সংকেত উপেক্ষা করেই এইসব ছবি। অনেক বাধা বিপত্তি সত্তেও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ছবি তোলার অভিজ্ঞতাই অন্যরকম। যে কোন কিছু প্রকাশের ক্ষেত্রে শেষ মুহুর্তেও আমি সৃজনশীলতা খুঁজি। সমুদ্রের ভয়াবহ টানে বারবার তার কাছে ফিরে যেতে চাই। এ গ্রন্থের যত নির্মাণ তা উপলব্ধি থেকে মাত্র।

আবিদ.এ.আজাদ
ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স
Creative Dhaka
  • Copyright © 2025
  • Privacy Policy Terms of Use