মানুষ তো সরল রেখা না। সে সব সময় সরল পথে চলে না, সরল কথা বলেও না। প্রচলিত ধারণা জ্ঞানী-গুণি-মহৎ মানুষেরা সব সময় ভালো ভালো কথা বলেছেন। বাণী চিরন্তনী কিংবা যে কোন উদ্ধৃতি সংকলনেই নানা মুনীর উৎকৃষ্ট সব কথায় ভরপুর পৃষ্ঠা দেখি। কিন্তু তিনারাও মানুষ। রাগে-ক্ষোভে-রসিকতায় তারাও অনেক কড়া কিংবা তিতা কথা বলেছেন। সেই সব বাঁকা কথার মধ্যে তিক্ততা থাকে, রসিকতা থাকে, থাকে লুকানো প্রজ্ঞাও। মৌমাছির কামড়ের ঝুঁকি নিয়েই মৌ খাওয়া যায়। তিতার মধ্যেও ভাইটামিন আছে। এইসব মাথায় রেখেই এই বই। সম্ভবত বাংলা ভাষায় এমন তিতা কথায় ভরা বই আর নেই। সেইদিক থেকে এটি প্রথম প্রয়াস, কিছু দুর্বল, তবে শুরুটা করা গেলো এটাই আশার কথা।
গোলাম আজম (নাকি আযম) মরে গেলেও আমরা বলি, আহা মানুষটা ভালো ছিলো, এই তো গেলো মাসেও আমার সাথে... এই তো সেদিন বলছিলেন...। এইসব বলার মধ্যে মানবিক গুণ হয়তো আছে। তবে সব সময় তা সত্যাচার হয় না। জীবিত অথবা মৃত সকল অবস্থাতেই মনে রাখা উচিত ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানুষ। অতএব একচেটিয়া মহান বলেও কেউ নেই। প্রবাদে যথার্থই বলা আছে জীবন ফুলের বিছানা না। তেমনি জ্ঞানীদেরকে একচেটিয়া ভাল কথার মানুষ ভাবারও কিছু নেই।
এইখানে কিছু তিতা কথা বা কটু কথা তুলে ধরা হলো। Colin M Jarman -এর Poisonous Quotes বইটি এক্ষেত্রে ব্যাপক অণুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। এখানের অনেক উক্তিই আপাতত বিষাক্ত মনে হলেও অনেক ক্ষেত্রে দারূণ সরস, কখনো বা নির্মম সত্য। নির্মম-সরস, সত্য-মিথ্যা যাই হোক না কেন মূদ্রার এপিঠ ওপিঠের মতো সবকিছুই আমাদের দরকার। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর বিষগুলো তো ক্ষেত্র বিশেষে ভীষণ রকমের জরুরি ওষুধ।
সুইস পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, দার্শনিক, জ্যোর্তিবিদ এবং বিষ বিশেষজ্ঞ প্যারাসেলসাস যথার্থই বলেছেন, ‘সবকিছুতে বিষ আছে এবং বিষাক্ত কোন বস্তু বিষ ছাড়া নয়। তবে এর পরিমাপই নির্ধারণ করে দেয় এটি বিষ নাকি ওষুধ।’
করলা, নিম, নিশিন্দা তিতা হলেও অনেক কাজে লাগে। নির্ভর করে পরিমাণ মতো খাচ্ছেন কিনা। ঠিক মতো ডোজ দেয়া গেলে তিতা জিনিসও কাজে লাগে। দেখা যাক এই বই কারো কাজে লাগে কিনা!
ও ভালো কথা, কেমন করে যেন, অনেক তিতা কথার মাঝে এই বইয়ে দুয়েকটা দরকারি কথা ঢুকে গেছে। আমি সত্যিই সে জন্য দুঃখিত।
ব্যক্তিগত একটা লোভ থেকে এই বই করা। অনেকেই বলে থাকেন আমি নাকি তিতা লোক, আমার কথাবার্তা অধিকাংশ সময়ই কটু। তা জগতে একমাত্র আমিই কড়া কথা বলি না, অনেক বড় বড় ব্যক্তিরাই বলেন, কাজেই আমিও তাদের মতো একজন মহান ব্যক্তি। হা হা হা...
আরেকটি কৈফিয়ৎ না-দিলেই নয়। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের কথা এখানে খুবই কমই আছে। এর কারণগুলো ব্যাখ্যা করা দরকার বোধহয়। প্রথমত, এগুলো সংগ্রহ করা অতো সহজ নয়। এ বিষয়ে যেহেতু ইতোপূর্বে কোন বই-পত্র হয়নি, নেটেও খুব কিছু পাওয়া যায় না তাই বিষয়টি একটু দূরূহ ভেবেই দূরে রয়েছি। আরেকটি কারণ হলো বাঙালিরা জাতি হিসাবে খুবই মিঠা। তারা তিতা কথা বলে কই!? দুয়েকজন যা বলেন তারা আবার ক্ষমতাবান, ভয়ে তাদের এড়িয়ে গেছি। কে চায় বই লিখে বিপদে পড়তে! আমাদের রাজনীতিবিদরা প্রায়ই পারস্পরিক হুল ফোঁটান, সেগুলোর মান নিয়েও কিছু সন্দেহ আছে বিধায় এই বইয়ে ঠাঁই দিলাম না। নিজে একটি বই বানাচ্ছি নিজের রুচিকে তো সেখানে কিছুটা প্রাধান্য দিবোই। তাছাড়া আমাদের তিতা কথার মধ্যে রস কম। পাঠক আপনাদের রসে বিঘ্ন ঘটাতে চাইনি। এখানে তিতা কথায়ও রস পাবেন আশা করি।
বিনীত অনুরোধ রইলো, এই বই যেহেতু ধর্মগ্রন্থ নয় সেহেতু এটির অদল বদল জীবিত অবস্থায় করতেই পারি। সর্বজ্ঞানী সমালোচক ছাড়া যে কারো মন্তব্য সানন্দে গ্রহণ করা হবে এবং পরের সংস্করণে কৃতজ্ঞতা সহ তা ছাপা হবে।
ই-ঠিকানা রইলো মতামত জানাবেন।
তিতা-মিঠা-টক-ঝালে-ঝোলে সবাই ভাল থাকুন।
সব কিছুর পর জগৎ সার্কাসময়, আনন্দময়।
জয় হোক পাঠকের।
মানুষ তো সরল রেখা না। সে সব সময় সরল পথে চলে না, সরল কথা বলেও না। প্রচলিত ধারণা জ্ঞানী-গুণি-মহৎ মানুষেরা সব সময় ভালো ভালো কথা বলেছেন।
By মুম রহমান
Category: উদ্ধৃতি
তিতা কথন কৈফিয়ৎ
মানুষ তো সরল রেখা না। সে সব সময় সরল পথে চলে না, সরল কথা বলেও না। প্রচলিত ধারণা জ্ঞানী-গুণি-মহৎ মানুষেরা সব সময় ভালো ভালো কথা বলেছেন। বাণী চিরন্তনী কিংবা যে কোন উদ্ধৃতি সংকলনেই নানা মুনীর উৎকৃষ্ট সব কথায় ভরপুর পৃষ্ঠা দেখি। কিন্তু তিনারাও মানুষ। রাগে-ক্ষোভে-রসিকতায় তারাও অনেক কড়া কিংবা তিতা কথা বলেছেন। সেই সব বাঁকা কথার মধ্যে তিক্ততা থাকে, রসিকতা থাকে, থাকে লুকানো প্রজ্ঞাও। মৌমাছির কামড়ের ঝুঁকি নিয়েই মৌ খাওয়া যায়। তিতার মধ্যেও ভাইটামিন আছে। এইসব মাথায় রেখেই এই বই। সম্ভবত বাংলা ভাষায় এমন তিতা কথায় ভরা বই আর নেই। সেইদিক থেকে এটি প্রথম প্রয়াস, কিছু দুর্বল, তবে শুরুটা করা গেলো এটাই আশার কথা।
গোলাম আজম (নাকি আযম) মরে গেলেও আমরা বলি, আহা মানুষটা ভালো ছিলো, এই তো গেলো মাসেও আমার সাথে... এই তো সেদিন বলছিলেন...। এইসব বলার মধ্যে মানবিক গুণ হয়তো আছে। তবে সব সময় তা সত্যাচার হয় না। জীবিত অথবা মৃত সকল অবস্থাতেই মনে রাখা উচিত ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানুষ। অতএব একচেটিয়া মহান বলেও কেউ নেই। প্রবাদে যথার্থই বলা আছে জীবন ফুলের বিছানা না। তেমনি জ্ঞানীদেরকে একচেটিয়া ভাল কথার মানুষ ভাবারও কিছু নেই।
এইখানে কিছু তিতা কথা বা কটু কথা তুলে ধরা হলো। Colin M Jarman -এর Poisonous Quotes বইটি এক্ষেত্রে ব্যাপক অণুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। এখানের অনেক উক্তিই আপাতত বিষাক্ত মনে হলেও অনেক ক্ষেত্রে দারূণ সরস, কখনো বা নির্মম সত্য। নির্মম-সরস, সত্য-মিথ্যা যাই হোক না কেন মূদ্রার এপিঠ ওপিঠের মতো সবকিছুই আমাদের দরকার। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর বিষগুলো তো ক্ষেত্র বিশেষে ভীষণ রকমের জরুরি ওষুধ।
সুইস পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, দার্শনিক, জ্যোর্তিবিদ এবং বিষ বিশেষজ্ঞ প্যারাসেলসাস যথার্থই বলেছেন, ‘সবকিছুতে বিষ আছে এবং বিষাক্ত কোন বস্তু বিষ ছাড়া নয়। তবে এর পরিমাপই নির্ধারণ করে দেয় এটি বিষ নাকি ওষুধ।’
করলা, নিম, নিশিন্দা তিতা হলেও অনেক কাজে লাগে। নির্ভর করে পরিমাণ মতো খাচ্ছেন কিনা। ঠিক মতো ডোজ দেয়া গেলে তিতা জিনিসও কাজে লাগে। দেখা যাক এই বই কারো কাজে লাগে কিনা!
ও ভালো কথা, কেমন করে যেন, অনেক তিতা কথার মাঝে এই বইয়ে দুয়েকটা দরকারি কথা ঢুকে গেছে। আমি সত্যিই সে জন্য দুঃখিত।
ব্যক্তিগত একটা লোভ থেকে এই বই করা। অনেকেই বলে থাকেন আমি নাকি তিতা লোক, আমার কথাবার্তা অধিকাংশ সময়ই কটু। তা জগতে একমাত্র আমিই কড়া কথা বলি না, অনেক বড় বড় ব্যক্তিরাই বলেন, কাজেই আমিও তাদের মতো একজন মহান ব্যক্তি। হা হা হা...
আরেকটি কৈফিয়ৎ না-দিলেই নয়। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের কথা এখানে খুবই কমই আছে। এর কারণগুলো ব্যাখ্যা করা দরকার বোধহয়। প্রথমত, এগুলো সংগ্রহ করা অতো সহজ নয়। এ বিষয়ে যেহেতু ইতোপূর্বে কোন বই-পত্র হয়নি, নেটেও খুব কিছু পাওয়া যায় না তাই বিষয়টি একটু দূরূহ ভেবেই দূরে রয়েছি। আরেকটি কারণ হলো বাঙালিরা জাতি হিসাবে খুবই মিঠা। তারা তিতা কথা বলে কই!? দুয়েকজন যা বলেন তারা আবার ক্ষমতাবান, ভয়ে তাদের এড়িয়ে গেছি। কে চায় বই লিখে বিপদে পড়তে! আমাদের রাজনীতিবিদরা প্রায়ই পারস্পরিক হুল ফোঁটান, সেগুলোর মান নিয়েও কিছু সন্দেহ আছে বিধায় এই বইয়ে ঠাঁই দিলাম না। নিজে একটি বই বানাচ্ছি নিজের রুচিকে তো সেখানে কিছুটা প্রাধান্য দিবোই। তাছাড়া আমাদের তিতা কথার মধ্যে রস কম। পাঠক আপনাদের রসে বিঘ্ন ঘটাতে চাইনি। এখানে তিতা কথায়ও রস পাবেন আশা করি।
বিনীত অনুরোধ রইলো, এই বই যেহেতু ধর্মগ্রন্থ নয় সেহেতু এটির অদল বদল জীবিত অবস্থায় করতেই পারি। সর্বজ্ঞানী সমালোচক ছাড়া যে কারো মন্তব্য সানন্দে গ্রহণ করা হবে এবং পরের সংস্করণে কৃতজ্ঞতা সহ তা ছাপা হবে।
ই-ঠিকানা রইলো মতামত জানাবেন।
তিতা-মিঠা-টক-ঝালে-ঝোলে সবাই ভাল থাকুন।
সব কিছুর পর জগৎ সার্কাসময়, আনন্দময়।
জয় হোক পাঠকের।