Purchase!

রাইনার মারিয়া রিলকে

রিলকে অসুস্থ থাকতেন প্রায়শই। শেষে তো তার লিউকেমিয়া হয়ে গেল। নিরাময় কেন্দ্রে থাকতেন তখন। তখন একটা গোলাপ তুলতে গেলেন। গোলাপের কাঁটা এসে তার আঙুলে বিঁধল। সেই কাঁটার আঘাত থেকে রিলকের রক্ত দূষণ বাড়িয়ে দিলো। মৃত্যু হলো তার।
By আল্লাদিত্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন
Category: অনুবাদ
Paperback
Ebook
Buy from other retailers
About রাইনার মারিয়া রিলকে
রিলকে ও গোলাপের কাঁটা

‘গোলাপ,
ওহ বিশুদ্ধ বিরোধ,
হওয়ার আনন্দ কারো-না ঘুমের
অনেক পাপড়ির অন্তরালে।’

রিলকে অসুস্থ থাকতেন প্রায়শই। শেষে তো তার লিউকেমিয়া হয়ে গেল। নিরাময় কেন্দ্রে থাকতেন তখন। তখন একটা গোলাপ তুলতে গেলেন। গোলাপের কাঁটা এসে তার আঙুলে বিঁধল। সেই কাঁটার আঘাত থেকে রিলকের রক্ত দূষণ বাড়িয়ে দিলো। মৃত্যু হলো তার।

তাহলে কি গোলাপের কাঁটাই কবির মৃত্যুর কারণ? তাহলে কি প্রেমের সাথে অনিবার্য যে বেদনা সেই ধ্রæপদী বেদনাই কবির মৃত্যুর কারণ। বারবার, রিলকে বারবার প্রেমে পড়েছেন। কিন্তু কোনো প্রেমই তাকে শান্ত করেনি, আশ্বস্ত করেনি। কী এক অবোধ অতৃপ্তিতে রিলকে এক প্রেম থেকে আরেক প্রেমের দিকে ছুটে গেছেন, বারবার। অপূর্ণ প্রেমের বেদনা নিয়ে রিলকের মতো কতো কবি ঝরে যায় অকালে, কে জানে!

জার্মান ভাষার সবচেয়ে গীতল কবি রাইনের মারিয়া রিলকে (১৮৭৫-১৯২৬)। তবে এই গীতলতা নেহাতই পেলব নয়। ভাবনায় রিলকে গভীর, অন্তর্দৃষ্টি মর্মভেদী। এমনকি নেহাতই বস্তুর ভেতরে প্রাণ এনে দিতে পারেন তিনি। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুকে তিনি অতীন্দ্রিয় ভাবনায় প্রকাশ করতে পারেন।

রিলকের সবচেয়ে সবচেয়ে বিখ্যাত দুটি কবিতা হলো ‘দুইনো শোকগাথা’ (Duineser Elegien) ও ‘অরফিউসের প্রতি সনেট’ (Die Sonette an Orpheus)। দুইনো শোকগাথায় দশটি শোকগাথা আছে আর অরফিউসের প্রতি সনেটে ৫৫টি সনেট আছে। দুটোই ছাপা হয় ১৯২৩ সালে। তবে ‘অরফিউসের প্রতি সনেট’ তিনি লেখেন ১৯২২ সালে। কন্যা ভেরা ওকামা’র খেলার সাথি রুথের আকস্মিক মৃত্যুতে রিলকে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এক তীব্র সৃষ্টির বেদনা ঝড় বয়ে যায় তার বুকের ভেতর। টানা তিন সপ্তাহ লিখে তিনি শেষ করেন ‘অরিফিউসের প্রতি সনেট’গুচ্ছ। রিলকে নিজে এই সনেটগুলোকে ‘কবর-ফলক’ (এৎধন-গধষ) বলে উল্লেখ করেছিলেন। অন্যদিকে রিলকের সবেচেয়ে গভীর দার্শনিক, মরমী, চিন্তাশীল এবং আলোচিত কাজ ‘দুইনো শোকগাথা’র দশটি গাথা লিখতে তাঁর সময় লেগেছে দশ বছর। ১৯১২ সালে রাজকুমারী মারি ফন থ্রান উন্ড টাক্সির আমন্ত্রণে আড্রিয়াটিক সমুদের তীরের ত্রিস্তের দুইনো প্রাসাদে থাকার সময় এই শোকগাথাগুলো লেখা শুরু করেন তিনি। ৮৫৯ লাইনের এই দীর্ঘ কাব্যগাথা রচনাকালীন সময়ে রিলকে কখনো মানসিক অসুস্থতায় ভ‚গেছেন, কখনো বিষাদে ডুবে গেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর নিজের জীবনের নানা টানাপড়েন ইতোমধ্যে রিলকের প্রেমিক মনকে ছিন্নভিন্ন করেছে অনেকটাই। গোলাপের কাঁটার মতো জীবনের নানা যন্ত্রণা বিদ্ধ করেছে রিলকেকে। সেই যন্ত্রণার ফসলই ‘দুইনো শোকগাথা’। জীবন, মৃত্যু, মানুষের সীমাবদ্ধা, নিঃসঙ্গতা, ভালোবাসা, কবির দায় ইত্যাদি বিষয় স্বগতোক্তির মতো উঠে এসেছে ‘দুইনো শোকগাথায়’। এই শোকগাথা দ্বারা বিশ শতকের বহু কবি, শিল্পী প্রভাবিত হয়েছেন, আলোড়িত হয়েছেন। কথা সত্য, শোকগাথাও আচ্ছন্ন করে মানুষকে, আলোড়িত করে, যদি তা রিলকের লেখা হয়। কেননা, তিনি গোলাপের জন্যে মরেন, গোলাপের কাঁটার জন্যে মরেন। সুন্দর আর সুন্দরের বেদনার যুগপৎ ধারক বাহক রিলকে।

রিলকের কবিতা আগেও পড়েছি। বুদ্ধদেব বসুর অসাধারণ অনুবাদ আমাদের ভালোবাসতে শিখিয়েছে রিলকের কবিতাকে। রিলকের ‘দুইনো এলিজি’ অনুবাদ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতো কবিও। এই দুইজনের অনুবাদের ঘোরতর শক্তি আমাকে আচ্ছন্ন করে। আল্লাদিত্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আমাদের ঘনিষ্ঠ জন। তিনিও কবিতার ঘোরে থাকেন। তার কাছ থেকে রিলকের কবিতা পেয়ে আপ্লুত হয়েছি। এটা তুলনার জায়গা নয়, তবু বলে রাখছি, দিত্তা আলাউদ্দিন তাঁর মতো করেই বোঝার চেষ্টা করেছেন রিলকেকে। তাঁর কবিতা নির্বাচনে অনেক বেশি জীবন, মরমীয়া দরদ আছে। রিলকের মূল সুর তিনি কতটা ধরতে পেরেছেন সেটা না-বলে, এটুকু বলি, তার কাছ থেকে আমরা আরও নিবিষ্ট অনুবাদ চাইবো, বারবার।

মুম রহমান
ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স
Creative Dhaka
  • Copyright © 2025
  • Privacy Policy Terms of Use